শবে কদরের নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোয়া

আসসালামু আলাইকুম, আপনাদের সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। আশা করি আপনারা সকলেই রমজানে অনেক অনেক ভালো আছেন। রমজান মাস আমাদের মাঝে থেকে প্রায় বিদায় নিয়ে চলে যেতে যাচ্ছে। এ রমজান মাসের বিভিন্ন ধরনের সওয়াব ও ইবাদত রয়েছে। সেই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইবাদত হচ্ছে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতের ইবাদত। এই শবে কদরের নামাজের নিয়মাবলী সম্পর্কে আমরা আপনাদেরকে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব।

শবে কদরের রাতের সবচেয়ে বড় ইবাদত হচ্ছে বেশি বেশি নামাজ আদায় করা। কিন্তু সেই নামাজের নিয়মাবলী সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত। তাদের সেই জানার ইচ্ছাকে মূল্য দিয়ে আমরা আজকে এই বিষয়ে লেখা লিখতে চলেছি। তাই শবে কদরের ফজিলত গ্রহণ করতে অবশ্যই লেখাটি ভালভাবে পড়ুন।

শবে কদরের নামাজের নিয়মাবলী

মুসলমানদের বা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সকল মাসের মধ্যে রমজান মাস হচ্ছে সবচেয়ে বরকতময় মাস। আর সেই মাসের মধ্যে লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান রাত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করা অনেক বছর ইবাদত করার সমান।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে আমাদের পূর্বে অন্য সকল নবীর উম্মতেরা বেশি বেশি বছর বাচতো। তারা অনেক বছর জীবনকালে অনেক এবাদত করার সুযোগ পেত। কিন্তু সেখানে আমাদের জীবনের সময়সীমা খুবই অল্প। তাই আগের সেই উম্মতদের এবাদতের সমান যেন আমরা হতে পারি সেজন্য মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে কিছু সুযোগ দিয়েছেন। সেই সুযোগের মধ্যে একটি হলো লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এ রাত।

শবে কদরের নামাজ

যদিও মানুষ মনে করে থাকে সাতাশে রমজানের রাতেই লায়লাতুল কদর বা শবে কদর এ রাত হয়। কিন্তু শরীয়তের মতে তা নয়। শরীয়তের মতে আরবি রমজান মাসের শেষ 10 দিনের বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হতে পারে। তাই সাতাশে রমজানের রাতে জন্যে অপেক্ষা করলে চলবে না। আমাদের উচিত রমজান মাসের শেষ দশ রাতের যেকোনো বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর খোজা। এবং বেশি বেশি সালাত আদায় করা।

Shobe Qadorer Namazer Niyom

এড়াতে প্রধানত নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা। আর দুই রাকাত করে প্রতিবার ইচ্ছামত নামাজ পড়া। এখানে আপনি সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সূরা দ্বারা নামাজ পড়তে পারেন। কিন্তু সব সময় দুই রাকাত করে নামাজ পড়তে হবে। দুই রাকাত করে আপনি ইচ্ছে মত যত খুশী ততবার সারারাত নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু এ নামাজ হবে নফল নামাজ।

লাইলাতুল কদরের রাতের নামাজি হচ্ছে নফল নামাজ। যদিও এটি নফল নামাজ মূল্য অনেক অনেক গুণ বেশি। রাত্রিতে নামাজ আদায় করা অনেক বছর ইবাদত করার সমান। এই রাত্রিতে এবাদত করার মাধ্যমে খুব সহজে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। তাই আমরা এ রাত্রিতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করব।

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত?

লায়লাতুল কদর বা শবে কদরের নামাজ এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। আপনি চাইলে দুই রাকাত করে নফল নামাজ সারারাত পড়তে পারেন। লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ পড়তে হয় এছাড়াও বিভিন্ন এবাদত করতে হয়। এড়াতে আপনি যতো খুশি ততো রাকাত নামাজ পড়তে পারেন।

লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ পড়লে অবশ্যই দুই রাকাত করে পড়তে হবে। সেই নামাজে অবশ্যই নফল হিসেবে নিয়ত করতে হবে। আপনি চাইলে দুই রাকাত নফল নামাজ এশার নামাজের পরে শুরু করে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত যত খুশি ততবার পড়তে পারেন।

শবে কদরের নিয়ত

আরবির বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।”

বাংলা অর্থ: “আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।”

শবে কদরের ফজিলত ও আমল

শবে কদরের নির্দিষ্ট কোন আমল করার কথা বলা হয়নি। কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো সকল প্রকার এবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ইবাদত হচ্ছে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা। এছাড়াও নফল নামাজের পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।

আরও বিভিন্ন ধরনের এবাদত রয়েছে। শবে কদরের রাতে এশার নামাজ পড়ে ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত ইচ্ছেমতো ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। যে যত বেশি ইবাদত করবে সে তত বেশি আমন সংগ্রহ করবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে ইশা এবং ফজরের সালাত আদায় করতে হবে।

শবে কদরের ফজিলত

শবে কদরের রাতের ফজিলত শুধু মুখে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কারণে এ রাত্রি হচ্ছে অত্যন্ত মূল্যবান একটি রাত। পূর্বের নবীর উম্মতেরা অনেক বছর জীবিত থাকার কারণে তারা অনেক আমল করার সুযোগ পেত। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উম্মতরা বেশি দিন জীবিত থাকবেনা। বলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আগের উম্মতের মানুষদের সমান আমল করার জন্য সুযোগ দিয়েছেন।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে আমল করা অনেক অনেক বছর আমল করার সমান। এ রাত্রিতে আমল করার মাধ্যমে অতি সহজে যে কেউ আল্লাহতালা নৈকট্য লাভ করতে পারবে। এবং পূর্বের উম্মতের লোকদের থেকে আমলের দিক থেকে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে। লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার একটি নেয়ামত স্বরূপ।

তাই আমরা অবশ্যই লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে বেশী বেশী আমল করার চেষ্টা করব। এবং অন্যকে বেশী বেশী আমল করার জন্য উৎসাহিত করব। এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে সকলকে জানাই এবং আমল করার জন্য তাকে বোঝাবো।

শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন