কোরবানির ইতিহাস, নিয়ম ও শিক্ষা

আসসালামু আলাইকুম, সকলকে জানাই পবিত্র ঈদুল আযহা এর শুভেচ্ছা। আমাদের সামনে চলে এসেছে পবিত্র কুরবানীর ঈদ। কুরবানী হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বছরে দুটি ঈদের একটি ঈদ। ইসলাম ধর্মের দুটি উৎসবের মধ্যে এটি একটি। কিন্তু কুরবানী এর ইতিহাস এত সহজে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে বলা শুরু করলে তা ব্যাখ্যা করে শেষ করা যাবে না। কোরবানির পেছনে অনেক বড় ইতিহাস রয়েছে। এটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নবী ও রাসুল হযরত ইব্রাহিম(আ.) ও তার একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাইল(আ.) এর বিশাল আত্মত্যাগের ঘটনার কারণে কুরবানী আমাদের পর্যন্ত এসেছে।

আজকে আমরা আপনাদের সামনে সেই কুরবানীর ইতিহাস ও কুরবানি কিভাবে আমাদের পর্যন্ত এলো সে সম্পর্কে জানাবো। চলুন তাহলে আর দেরি না করে কুরবানীর ইতিহাস নিয়ম ও শিক্ষা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কোরবানি অর্থ কি

আযহা এর অর্থ হল ত্যাগ বা উৎসর্গ। কোরবান অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। এই দুটি শব্দের অর্থের সমন্বয়ে বলা যায় যে, ত্যাগ বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের যে চেষ্টা করা হয় তাকেই ঈদুল আজহা বা কোরবানি বলা হয়।

বর্তমান অর্থে কোরবানি হলো- পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।

কোরবানির নিয়ম

কোরবানি করার নিয়ম হচ্ছে কোরবানির যেসকল পশু নির্দিষ্ট করা রয়েছে তা কুরবানী করা। তবে কুরবানী করার জন্য অবশ্যই কুরবানীদাতার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। আর কোরবানির পশু কোরবানিদাতার নিজের জবাই করা হচ্ছে মুস্তাহাব।

তবে সে যদি জবাই করতে অক্ষম হয় বা জবাই করা তার পক্ষে সম্ভব না হয় তবে অন্যকে দিয়ে ও কুরবানীর পশু জবাই করা যায়। তবে জবাইয়ের সময় কোরবানি দাতার সামনে থাকা উত্তম।

জবাই করার সময় কোরবানির পশু কেবলা মুখী করে সোয়াতে হয়। এরপর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে কুরবানীর পশু জবাই করতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বললে জবাই করা প্রতিটি হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ না বলে থাকে তবে তার মাংস খাওয়া যায়।

কোরবানির দোয়া

কোরবানি করার বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। কোরবানি করার পূর্বে কোরবানির পশু কেবলামুখী শোয়ানোর পর একটি দোয়া পড়তে হয়। সে দোয়াটি হলো-

উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

এরপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানির পশু জবাই করা।

কোরবানির পশু জবাই করার পর আরো একটি দোয়া পড়তে হয় দোয়া পড়া-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম।

বিশেষ দ্রষ্টব্য – যদি কেউ একাকি কোরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কোরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিন’ বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

কোরবানির শিক্ষা

কোরবানির মানে হচ্ছে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পশুকে জবাই করা। এর মাধ্যমে বান্দার মন আল্লাহর প্রতি দৃঢ় হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যেকোনো কিছু ত্যাগ করতে পারার শিক্ষা লাভ করা যায়।

কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বান্দার আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়। অর্থাৎ তার মনকে ও তার আত্মাকে সংশোধন করা। কোরবানি করার দেওয়ার ফলে বান্দরবান ও আত্মা বিশুদ্ধ হয়।

কোরবানি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার দেওয়া পরীক্ষায় পরীক্ষা দেওয়া। কোরবানি দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার একটি বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়। সঠিকভাবে কোরবানির করলে অবশ্যই সকলে আল্লাহ তাআলার সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।

কোরবানির ঈদ আমাদের আরও একটি শিক্ষা দেয়। ঈদ একাকী নয় সকলে মিলে একসাথে মিলেমিশে উপভোগ করাই হচ্ছে আনন্দ ঈদ। আর এই ঈদে সকলে মিলে গরু কোরবানি ও জবাই করার মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেয়া যায়। এর মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা গরীব ও অসহায় মানুষদের দিকে একবার হলেও তাকায়।

তাই আমাদের উচিত এর শিক্ষাকে জীবনে গ্রহণ করা। সে শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবন পরিচালনা করা। ধনী-দরিদ্র গরীব অসহায় সকলকে নিয়ে মিলেমিশে বসবাস করা। এবং যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব অবশ্যই তার কুরবানী করা।

সর্বশেষ কথা- যদি আমাদের মধ্যে কারো উপর কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আমরা কোরবানি করার চেষ্টা করব। আর ওই ধরনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে আমাদের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সকলকে জানাই অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা।

আরো পড়ুন – তাহাজ্জত নামাজের নিয়ম