আর সেই ঈদ উল আযহা। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। মনকে প্রফুল্ল রাখতে ও নির্মল বিনোদনের জন্য ইসলাম বছরে বড় দুটি উৎসবের সুযোগ দিয়েছে। প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর এই দুটি ঈদ উদযাপন পালন করে থাকে। তারা সালাত আদায় ও কুরবানির মাধ্যমে ঈদের খুশি প্রকাশ করে। ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। ঈদের নামাজ বছরে দুইবার পড়ার কারণে অনেকে নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত ভুলে যায়। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত নিচে দেওয়া হল।
এখানে যা যা পাবেন
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম
খোলা জায়গায়, মসজিদ কিংবা বাসা-বাড়িতে যেখানেই হোক না কেন ঈদের নামাজ অবশ্যই জামায়াতের সঙ্গে পড়তে হবে। জুমা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে সকল শর্ত রয়েছে, ঠিক তেমনি ঈদের নামাজ আদায় করার জন্যও একই শর্ত প্রযোজ্য।
১. ওয়াকফকৃত জায়গা।
২. জামায়েত কমপক্ষে তিন জনের।
৩. খুতবা পাঠ ও শ্রবণ।
৪. সূর্য উদিত হওয়ার পর দ্বীপহরের আগে পড়া
অর্থাৎ ঈদের নামাজ জামাআত ছাড়া আদায় করা যাবে না। বাসা বাড়িতে যদি ঈদের নামাজ আদায় করতে হয় তাহলে সেখানেও জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। আর একান্ত অপারগতা ছাড়া বাসায় ঈদের জামাআত শুদ্ধ হবে না। যদি আপনার কোন সমস্যা থাকে বা কোন পরিস্থিতির কারণেই আপনি যদি ঈদগায় না যেতে পারেন তাহলে আপনি বাসায় নামাজ পড়তে পারবেন। কিন্তু বাসায় ঈদের নামাজ পড়ার কোন বিধান নেই। ঈদের নামাজ বাড়িতে পড়ার বিষয় না। ঈদের সালাদের তো তাহলে কোন মূল্য থাকলো না। ঈদগাহের প্রয়োজন হলো না। তাহলে তো ঈদের মর্যাদাটাই হারিয়ে যাবে। যদি আপনি অসুস্থ বা কোন সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে বাড়িতে পড়ে নিতে পারবেন।
ঈদের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজের জন্য অন্যান্য ওয়াক্তিয়া নামাজের মত কোন আজান বা ইকামত নেই। তবে মতই উচ্চস্বরে জুমার নামাজের মত কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সালাত দিনের বেলা হওয়া সত্ত্বেও, অন্যান্য নামাজ থেকে ঈদের নামাজের পার্থক্য হল অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর দিতে হয়।
.প্রথমত রাকাতে “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়া।
.দ্বিতীয় রাকাতে সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
ঈদের নামাজের নিয়ত
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়তের বাংলা উচ্চারণ : নাওআইতু আন উছাল্লিয়া আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আজহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজীবুল্লাহি তা আলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সঙ্গে এই ইমামের পিছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি ,,আল্লাহু আকবার।
প্রথম রাকাত
১. তাকবীরে তাহরিমা : ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাধা।
২. ছানা পাড়া : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতালা ওয়াতাআলা জাদুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩. অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দেয়া : এক তাকবীর থেকে আরেকটা তাকবীরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও অদ্বিতীয় তার পীরের উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবীর দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেওয়া।
৪. আউযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া।
৫. সূরা ফাতিহা পড়া।
৬. সুরা মিলানো। অতঃপর নিয়মিত নামাজের মত রুকু এবং সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১. বিসমিল্লাহ পড়া।
২. সূরা ফাতেহা পড়া।
৩. সূরা মিলানো।
৪. সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর দেওয়া। প্রথম রাকাতের মত দুই তাকবীরে উভয় হাত কাধ বরাব উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া অতঃপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে হাত বাধা।
৫. তারপর রুকুর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৬. সেজদা আদায় করে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
ঈদুল আযহার দিনের দেশের সুন্নাত
১. খুব রে ঘুম থেকে ওঠা।
২. মিসওয়াক করা।
৩. গোসল করা।
৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পড়া।
৫. আতর ব্যবহার।
৬. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া।
৭. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া।
৮. পাড়া বা মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামাতে ফরজের নামাজ আদায় করা।
৯. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া।
১০. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কোরবানির গোস্ত দিয়ে খাওয়া শুরু করা।
১১. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা।
১২. ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া, আর সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া।
১৩. ঈদগাহে যাওয়ার সময় দোয়া পড়ে পড়ে যাওয়া : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
১৪. শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত।